কুমিল্লার দেবিদ্বারে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত তিন শহীদের পরিবার এখনও স্বজন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে পরিবারগুলো পড়েছে চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তার মুখে। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এক বছরেও তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি।
গত বছরের ১৯ ও ২০ জুলাই ঢাকায় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন কুমিল্লার দেবিদ্বারের তিনজন, মো. কাদির হোসেন সোহাগ (২৪), মো. সাগর মিয়া (১৯) এবং মো. হোসাইন মিয়া (১০)। তিনজনই ছিলেন তাদের পরিবারের ভরসার শেষ আশ্রয়।
সূর্যপুর গ্রামের শহীদ কাদির হোসেন সোহাগ ঢাকায় পাঠাও কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতেন। ২০ জুলাই গোপীবাগে মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। ছোট ভাই নাজমুল হাসান জানান, ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে, মায়ের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। জুলাই ফাউন্ডেশন কিছু সহায়তা দিলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা দিশেহারা, বলেন নাজমুল।
শহীদ সাগর মিয়া মিরপুরে ভ্যানে করে সবজি ও কলা বিক্রি করতেন। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। বাবা হানিফ মিয়া বলেন, ছেলের আয়ে সংসার চলত। আমি অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারি না। এখন সামনে কীভাবে চলব তা বুঝে উঠতে পারছি না।
মাত্র ১০ বছরের হোসাইন মিয়াও পরিবারের উপার্জনের দায়িত্ব নিয়েছিল। চিটাগাং রোডের বাসে বাসে চকলেট, আচার বিক্রি করত সে। ২০ জুলাই পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় হোসাইন। বাবা মানিক মিয়া বলেন, “আমার ছেলেই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। আমরা দুজনেই অসুস্থ, ছেলের মৃত্যুর পর দান-অনুদানেই চলছি। সামনের দিন নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।”
তিন শহীদের পরিবার এখন সরকারের স্থায়ী সহায়তা প্রত্যাশা করছে। দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত খান বলেন, তিন পরিবারকে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। ভবিষ্যতে কোনো সরকারি সহায়তা এলে তা তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
তবে পরিবারগুলোর দাবি, মানবিক সহায়তা ও স্থায়ী পুনর্বাসন ছাড়া তারা এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে না। তাদের আহ্বান শহীদদের আত্মত্যাগ যেন পরিবারগুলোর দুর্ভোগে ঢাকা না পড়ে।