গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত দেড় দশকের আওয়ামী লীগ সরকারের ভারতকেন্দ্রিক বৈদেশিক নীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়, যা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনামলে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি:
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমশ অবনতির দিকে যায়। সীমান্তে সংঘর্ষ ও পুশব্যাকের ঘটনাও বেড়েছে। ভারতের ভিসা নীতি কঠোর হওয়ায় চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসা ও পর্যটনের জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারত যাত্রায় বড় বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশি হাইকমিশনে হামলা এবং ভারতের রাজনৈতিক মহলে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে।
চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি:
ভারত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে গত এক বছরে চীন সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। চীনের সঙ্গে বিনিয়োগ, নদী ব্যবস্থাপনা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধান এবং মোংলা বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শীতলতার সুযোগ নিয়ে চীন রাজনৈতিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দকে দেশটিতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের স্বতন্ত্র পরিবর্তন:
দীর্ঘদিন জটিল ও চরম শীতল থাকা পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। ক্ষমতার পরিবর্তনের পর দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ও নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে আপাতত ‘অলংকারিক’ বলে দেখছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক:
শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন ছিল। তবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে নতুন সংস্কার কর্মসূচিতে সমর্থনের কথা জানিয়েছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুল্ক আরোপ করায় সাম্প্রতিক সময়ে দু দেশের সম্পর্ক কিছুটা জটিল হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত:
অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, “বাংলাদেশের নতুন সরকার আগের চেয়ে অনেক প্রাকটিক্যাল হয়ে একটি নির্দিষ্ট দেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে, যার ফলে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে।” সাবেক কূটনীতিক এম হুমায়ুন কবির বাংলাদেশের বহুপাক্ষিক কূটনীতিক অবস্থানের প্রশংসা করেন, তবে তিনি ভারতের সঙ্গে চলমান টানাপোড়েন ও ভিসা জটিলতাকে উদ্বেগজনক মনে করেন।