ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি গাজা সিটি দখলের জন্য সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। পাশাপাশি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে পাঁচটি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়, এমন একটি বিকল্প বেসামরিক সরকার গঠন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেবে, যেখানে লাখো ফিলিস্তিনি বাস করেন। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা উঠেছে দেশটির ভেতরেও। জিম্মিদের পরিবারগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই পদক্ষেপে জিম্মিদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়বে।
গৃহীত পাঁচ নীতি
১. হামাসের নিরস্ত্রীকরণ
২. জীবিত ও মৃত জিম্মিদের ফেরত আনা
৩. গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ
৪. গাজায় ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ
৫. বিকল্প বেসামরিক সরকার গঠন (হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়)
জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন, গাজা দখলের এই পরিকল্পনা লাখো ফিলিস্তিনির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং অবশিষ্ট জিম্মিদের জীবন হুমকিতে ফেলতে পারে। বর্তমানে গাজার প্রায় ৮৭% এলাকা ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণে বা উচ্ছেদ নির্দেশের আওতায় রয়েছে।
নেতানিয়াহু ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজা দীর্ঘমেয়াদে পরিচালনা করতে চায় না, বরং হামাসকে ক্ষমতাচ্যুত করে অঞ্চলটি আরব বাহিনীর হাতে তুলে দিতে চায়। তবে তিনি কোন দেশগুলো এতে জড়িত থাকবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনা
ইসরায়েলি সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াল জামির পরিকল্পনাটিকে সেনাদের জন্য “ফাঁদে পা দেওয়ার” সমান বলে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, এটি হামাসের হাতে থাকা জীবিত প্রায় ২০ জন জিম্মির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে।
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত সাইমন ওয়াল্টার গাজার পূর্ণ দখলকে “বিশাল ভুল” বলে অভিহিত করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংও গাজায় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে ইসরায়েলকে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি বলেছেন, গাজা দখলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণই ইসরায়েলের বিষয়।
যুদ্ধের প্রেক্ষাপট
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে প্রায় ৫০ জন এখনও জীবিত। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
বর্তমানে গাজার প্রায় ৭৫% ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে এবং সম্ভাব্য এই নতুন অভিযান কয়েক মাস ধরে চলতে পারে, যা ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও মানবিক সংকট আরও তীব্র করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।