রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলসংলগ্ন এলাকায় একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে একই পরিবারের তিন শিশু আরিয়ান, বাপ্পি ও হুমায়ের। সম্পর্কে তারা চাচা-ভাতিজা হলেও বয়সে প্রায় সমান, ছিল একে অপরের বন্ধু ও সহপাঠী। একসঙ্গে স্কুলে যেত, খেলত, হাসত। সোমবারও (২১ জুলাই) তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু কোচিং শেষ করে বাসায় ফেরার পথে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় নিভে যায় তাদের জীবনের প্রদীপ।
তারা এখন ঘরে ফিরেছে, তবে নিথর দেহ হয়ে। পাশাপাশি শুয়ে আছে দিয়াবাড়ির তারারটেক মসজিদের পাশের কবরস্থানে। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী বাপ্পি স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু শাহিনের ছেলে। একই শ্রেণির হুমায়ের তার ভাইয়ের সন্তান। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আরিয়ানও তাদের চাচাতো ভাই।
ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে কোচিংয়ের ক্লাস চলছিল। শেষ হওয়ার কথা ছিল দেড়টায়। জোহরের নামাজ শেষে বাপ্পিকে আনতে স্কুলে রওনা দেন শাহিন। পথে হঠাৎ বিকট শব্দ ও ধোঁয়ার কুণ্ডুলি দেখে দৌড়ে যান স্কুল প্রাঙ্গণে।
শাহিন বলেন, আমার ছেলে যে ক্লাসে পড়ে, তার আগের ক্লাসটায় বিমানটা ঢুকেছে। তখনই বুঝে যাই, আমার ছেলে আর নেই।
প্রথমে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বাপ্পি ও আরিয়ানকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় হুমায়ের, মধ্যরাতে মারা যায় আরিয়ান, আর সর্বশেষ মারা যায় বাপ্পি।
এই ঘটনায় মাইলস্টোন স্কুলের আরও দুই শিক্ষার্থী মারা গেছেন, যাদের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
তারারটেক এলাকায় এখন শুধুই শোকের ছায়া। দুদিন আগেও যে মাঠে শিশু তিনটি খেলত, সেই মাঠের পাশেই এখন তাদের কবর। তাদের বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা কাঁদছে চোখের জলে।
আরিয়ানের সহপাঠী রাইয়ান আফনান বলেন, আমি তখন লাইব্রেরিতে ছিলাম। স্কুল থেকে বের হতেই বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। বাঁচতে পেরেছি শুধু ক্লাসে না থাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোতালেব হোসেন বলেন, একদিন আগেও দেখেছি ওদের একসঙ্গে খেলতে। আজ তারা নেই, বুঝতেই পারছি না, কীভাবে এমন হয়ে গেল।
এ দুর্ঘটনায় গোটা উত্তরায় নেমে এসেছে শোকের আবহ। শিশুদের এই অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ। এলাকাবাসীর একটাই প্রশ্ন, কেন স্কুলের পাশেই চলছিল যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ?
তিনটি ছোট জীবনের এমন করুণ পরিণতি যেন সবার জন্য একটিই বার্তা-নিরাপত্তা হোক সবার আগে।