খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের পাঁচ মাস পার হলেও অচলাবস্থা কাটেনি। উপাচার্য না থাকায় সংকট আরও দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী চরম অনিশ্চয়তা ও সেশনজটে ভুগছেন।
এরই মধ্যে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ রোববার ক্লাসে ফিরেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ নামের একটি পেজে শনিবার পোস্ট করে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, ‘সব নেতিবাচকতা দূরে ঠেলে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আমরা ক্লাসে ফিরছি।’
তবে ক্লাস শুরুর দিনেও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল (ইইই) বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলেও কোনো শিক্ষক ক্লাস নেননি।
শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষকরা এখনও ক্লাস নেওয়া শুরু করেননি। ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশির মুনতাকিম ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা পাঁচ মাস পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়েছি। শিক্ষকদের অনুরোধ করেছি। ক্লাস শুরু না হওয়ার কোনো বৈধ কারণ দেখি না।’
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, উপাচার্য না থাকায় কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার জানান, ‘ভিসি না থাকায় কেউ দায় নিতে চান না। যেকোনো সময় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা রয়েছে।’
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহউপাচার্যকে অপসারণ করা হয়। চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষক সমাজের বিরোধিতায় তিনি পদত্যাগ করেন।
এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। গত ১০ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে আছে। meanwhile, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা চালাতে ইউজিসির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক আর্থিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক সমিতির অবস্থান পরিষ্কার—আন্দোলনের সময় শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার না হলে তারা ক্লাসে ফিরবেন না। ১৬ জুলাইয়ের সভাতেও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। ১৯ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০২০ সালে ভর্তি হয়ে দেড় বছরের সেশনজট ভোগ করেছি। আবারও একই আশঙ্কায় ভুগছি।’
শিক্ষার্থীরা দ্রুত সঙ্কট নিরসন ও ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন।