বিশ্বে প্রথমবারের মতো একেবারে নতুন এক ধরনের রক্তের গ্রুপ আবিষ্কৃত হয়েছে, যা পাওয়া গেছে মাত্র একজন মানুষের শরীরে। ফ্রান্সের ওভারসিজ অঞ্চল গুয়াদেলুপের ৬৮ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে পাওয়া এই রক্তের গ্রুপটির নাম রাখা হয়েছে ‘গুয়াদা নেগেটিভ’। নামটি এসেছে গুয়াদেলুপ দ্বীপের স্থানীয় নাম ‘Gwada’ থেকে।
সম্প্রতি ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রক্ত সংস্থান সম্মেলন ‘International Society of Blood Transfusion Congress’-এ গবেষকেরা এই যুগান্তকারী আবিষ্কার তুলে ধরেন।
২০১১ সালে প্যারিসে এক রুটিন অস্ত্রোপচারের আগে ওই নারীর রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায়, তার রক্ত কোনো প্রচলিত গ্রুপের সঙ্গে মেলে না। এমনকি বিশ্বজুড়ে কোথাও তার রক্তের উপযুক্ত মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে সময় প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে গবেষণার কাজ থেমে যায়। পরে ২০১৯ সালে উন্নত জিন বিশ্লেষণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার রক্ত নিয়ে পুনরায় গবেষণা শুরু হয়।
দীর্ঘ দুই বছরের গবেষণায় বিজ্ঞানীরা তার পূর্ণ জিনোম বিশ্লেষণ করে দেখতে পান, তার রক্তে থাকা PIGZ নামের একটি জিনে রয়েছে বিরল মিউটেশন। এর ফলে রক্তকণিকার গঠন একেবারেই অন্যরকম হয়ে গেছে। এই কারণেই তার রক্ত বিশ্বে কারও সঙ্গে মেলে না।
ফরাসি রক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘Établissement français du sang (EFS)’-এর জীববিজ্ঞানী থিয়েরি পেরার্ড জানান, “এই নারী এমন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কেবল নিজের রক্ত নিজেই নিতে পারবেন, পৃথিবীর আর কারও সঙ্গে তার রক্তের মিল নেই।”
রক্তের গ্রুপ নিয়ে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, আমরা সাধারণত ABO এবং Rh সিস্টেমের অধীনে ৮টি রক্তের ধরন জানি। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ISBT-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত রক্ত গ্রুপ সিস্টেমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮টি। আর সর্বশেষ সংযোজন হলো ‘গুয়াদা নেগেটিভ’।
গবেষকদের মতে, এমন নতুন রক্ত গ্রুপের আবিষ্কার বিরল রক্তধারী রোগীদের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে। বর্তমানে গবেষণা দল গুয়াদেলুপ অঞ্চলে আরও এমন রক্তধারীদের খুঁজে বের করতে রক্তদাতা অনুসন্ধান শুরু করেছে। কারণ, রক্তের ধরন অনেকাংশে বংশগত হওয়ায় একই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এই রক্তধরনের মিল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
EFS এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “নতুন রক্ত গ্রুপের এই আবিষ্কার বিরল রক্তধারীদের উন্নততর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।”