কাতারভিত্তিক এক সাংবাদিক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাইরে বসা কিছু রাজনীতিক ও তাদের সমর্থকরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক পরিমাণ জাল নোট দেশে প্রবেশ করানোর ষড়যন্ত্র করছেন। দাবি করা হচ্ছে, প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ জাল নোট বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠানো হচ্ছে, যেখানে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে।
সূত্রে বলা হয়েছে, নকল নোটের মান এতটাই নিখুঁত যে খালি চোখ বা ব্যাংকের যাচাই মেশিনে সনাক্ত করা কঠিন। হোলোগ্রাম, সিকিউরিটি স্ট্রিংসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও অনুকরণ করা হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, টাঁকশালের নোট তৈরির মেশিন ও কিছু যন্ত্রাংশ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেই এসেছে এবং সেখানেই বিশেষ ব্যবস্থায় নোট ছাপানো হচ্ছে।
ফেসবুকে পোস্টটি ভাইরাল হওয়ার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, অভিযোগটি সত্য হলে এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তবে মূল দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাজারে পুরনো নোট কমানো হয়েছে, নতুন নোটই প্রাধান্য পাচ্ছে।
এক সরকারি কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে এমন ষড়যন্ত্র হয়, তা রোধ করা কঠিন। গত ১৫ বছরে টাঁকশালে নিয়োগ পাওয়া অধিকাংশ কর্মকর্তা–কর্মচারীই রাজনৈতিকভাবে নির্দিষ্ট গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাবেক নোট ডিজাইনারদের নজরদারির আওতায় আনা যেতে পারে।
তদন্তে দেখা গেছে, জাল নোট চক্র অনলাইনে সক্রিয়। ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপে গোপন গ্রুপ তৈরি করে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ১ লাখ টাকার নোট মাত্র ১০–১৮ হাজার টাকায় বিক্রির অফার, ‘মানি ব্যাক গ্যারান্টি’ ইত্যাদি প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশ ইতিমধ্যেই শতাধিক অনলাইন পেজ ও গ্রুপ শনাক্ত করেছে এবং তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন-বৃহৎ পরিসরে জাল টাকার প্রবাহ মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে, নগদে মানুষের আস্থা কমাবে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। নির্বাচনের সময় নগদের প্রবাহ বাড়ার কারণে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নকল নোট পার্শ্ববর্তী দেশে তৈরি হয়ে চোরাপথে দেশে প্রবেশ করছে। ডিলার থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত একটি সুসংগঠিত চেইন কাজ করছে। অভিযোগ আছে, ভারতের কিছু পালানো নেতা এই চক্রের সঙ্গে সরাসরি জড়িত; তবে যাচাই প্রক্রিয়া চলমান।
ডিএমপি গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, জাল টাকার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকার জন্য নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
এই ঘটনায় তদন্ত চলমান। অভিযোগের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হলে দ্রুত আইনগত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।