দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক নবজাতক কন্যাশিশুকে ফেলে রেখে গেছেন তার স্বজনেরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি ঘটে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এক পঞ্চাশোর্ধ্ব দম্পতি নবজাতকটিকে নিয়ে এসে নিজেদের শিশুটির নানা-নানি হিসেবে পরিচয় দেন। ভর্তি রেজিস্টারে শিশুটির মায়ের নাম ইনছুয়ারা, বাবার নাম শাহিনুর, ঠিকানা আলাদিপুর, ফুলবাড়ী লেখা হয়। চিকিৎসকেরা শিশুটির মায়ের খোঁজ চাইলে তারা জানান-মা নিচে আছেন। কিছুক্ষণ পর তাঁরা মাকে আনতে নিচে যান, কিন্তু আর ফিরে আসেননি। অল্প সময় পরই শিশু ওয়ার্ডের বাইরে এক বেডে একা পড়ে থাকতে দেখা যায় নবজাতকটিকে।
শিশুটির পাশে থাকা একটি বাজারের ব্যাগ থেকে পাওয়া যায় কিছু কাপড়চোপড়, ওষুধ এবং একটি চিরকুট। তাতে লেখা ছিল-
আমি মুসলিম, আমি এক হতভাগী মানুষ। পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চাটিকে রেখে যাচ্ছি। দয়া করে কেউ দেখবেন। জন্মতারিখ ৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার।
হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক গোলাম আহাদ জানান, শিশুটি স্বাভাবিক সময়ের আগে জন্ম নিলেও বর্তমানে সুস্থ আছে। তাকে ওয়ার্মারে রাখা হয়েছে এবং ফটোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের অন্যান্য মায়েরা মমতার সঙ্গেই শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন।
শুক্রবার দুপুরে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে শিশুটিকে দত্তক নিতে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ভিড় করেন অনেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশুটির চিকিৎসা চলছে এবং দত্তক সংক্রান্ত বিষয়টি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই ঘটনাটি স্থানীয়দের মধ্যে গভীর মানবিক আবেগের জন্ম দিয়েছে—একদিকে পরিত্যক্ত নবজাতকের অসহায়ত্ব, অন্যদিকে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ও আশ্রয় দেওয়ার আগ্রহ যেন একে পরিণত করেছে সহমর্মিতার এক বাস্তব ছবিতে।