নিজের জীবনসংগ্রাম, পোশাক নিয়ে সামাজিক ধারণা ও নারীর স্বাধীনতা নিয়ে খোলামেলা এক বক্তব্য দিয়েছেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি তুলে ধরেছেন নিজের অভিজ্ঞতা ও আত্মউন্মোচনের গল্প।
পোস্টের শুরুতেই বাঁধন লেখেন, আমি একসময় ছিলাম এক আদর্শ ছোট মেয়ে। মেধাবী, বিনয়ী, আর পরতাম একেবারে সমাজ যেভাবে চায়, সেভাবেই। মা-বাবা যা পরাতে চাইতেন, সমাজ যা ‘ভদ্র’ বলে মানত, সেটাই গায়ে দিতাম। কৈশোরে কখনো জিনস পরিনি, কারণ সমাজের চোখে ওটা ছিল ‘খারাপ মেয়েদের’ পোশাক।
তিনি জানান, জীবনের একটা সময় তিনি সমাজের চোখে নিখুঁত ‘ভালো মেয়ে’ হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই ছাঁচে ফেলে গড়া জীবন একসময় ভেঙে পড়ে। বাঁধন লিখেছেন, আমি চাইছিলাম বিচ্ছেদ, একটি সহিংস, ট্রমাময় দাম্পত্যজীবন থেকে মুক্তি। ঠিক তখনই ২০০৬ সালে আমি অংশ নিই লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায়। সেই মঞ্চ আমাকে নতুনভাবে চিনতে শেখায়। নারী হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে।
বাঁধনের ভাষ্যে, তখনো সমাজের চোখে ‘ভালো নারী’ হওয়ার চাপ অনুভব করতেন তিনি। দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদের পর নিজেকে শুধু ব্যর্থ মনে হয়নি, মনে হয়েছিল সমাজ আমাকে ‘সবচেয়ে খারাপ নারী’ বলে ছাপ মেরে দিয়েছে। সেই ছাপ আমাকে ভেঙে দেয়। আমি তো সারা জীবন কাটিয়েছি ‘ভালো’ হওয়ার জন্য। কিন্তু পরিহাস দেখুন—ঠিক সেই ব্যর্থতার মাঝেই আমি খুঁজে পেয়েছি সাহস, একজন মানুষ হয়ে বাঁচার, সমাজের বানানো চরিত্র হয়ে নয়।
এই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, কীভাবে সময়ের সঙ্গে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছেন, পোশাক নিয়ে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছেন। তিনি জানান, একবার এক টিভি সাক্ষাৎকারে হাতাখোলা ব্লাউজ পরে গেলে তাকে অনুরোধ করা হয় চুল দিয়ে কাঁধ ঢেকে রাখতে। এমন পরিস্থিতি বহুবার পোহাতে হয়েছে তাকে।
বছরের পর বছর আমি অগণিত উপদেশ শুনেছি। মা হিসেবে কী পরা উচিত, ‘শালীন নারী’ হিসেবে কেমন পোশাক মানায়, রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে হয়ে কীভাবে চলা উচিত। কিন্তু জানেন কি? এখন আমি কিছুই গায়ে মাখি না।
পোস্টের শেষাংশে বাঁধন লেখেন, আমি স্বাধীন। কী পরব, কী বলব, কী ভাববো, কিংবা কীভাবে বাঁচবো সেটা একমাত্র আমার সিদ্ধান্ত। অন্য কারও নয়। এই সমাজের বিচার-বিশ্লেষণে মাঝে মাঝে গা জ্বলে যায়, মন খারাপ হয়। কিন্তু এটাই আমাদের নারীদের প্রতিদিনের বাস্তবতা।
এই পোস্টে বাঁধনের বক্তব্য শুধু একজন নারীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই নয়, বরং তা হয়ে উঠেছে সমাজের প্রচলিত মূল্যবোধ ও নারী স্বাধীনতা নিয়ে এক সাহসী উচ্চারণ।