শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে অন্তত ছয়টি বসতবাড়ি ও ১৩টি দোকানসহ মোট ১৯টি স্থাপনা মুহূর্তেই পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে হঠাৎ করে এ ভাঙন শুরু হয়। বিকেল ৪টার পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, চোখের সামনে একে একে হারিয়ে যেতে থাকে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জীবনের সঞ্চয় ও স্মৃতি। পুরো মাঝিকান্দি-নাওডোবা এলাকা জুড়ে আতঙ্ক আর হাহাকার নেমে আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে পদ্মায় বিলীন হয়ে যায় ছয়টি পরিবারে বসতবাড়ি এবং ১৩টি দোকান। এতে আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার এখন নদীভাঙনের সরাসরি ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেকে রাতের আঁধারে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও মালপত্র সরিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে প্রায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর পূর্ব পাশে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর নভেম্বর, চলতি বছরের ৮ জুন এবং সর্বশেষ এই ভাঙনে বাঁধ কার্যত ধসে পড়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জলিল সরদার অভিযোগ করে বলেন, বাঁধে আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল, বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সেই অবহেলার ফলেই এখন গ্রাম হারানোর শঙ্কায় পড়েছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “দুপুরে দেখি মাটি সরে যাচ্ছে, তারপর একে একে সব দোকানপাট, ঘরবাড়ি পদ্মায় তলিয়ে গেল। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। স্থায়ী বাঁধ ছাড়া রক্ষা নাই।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “ভাঙন পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। আমরা জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছি। মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান জানান, সোমবারের ধস প্রায় ২০০ মিটার দীর্ঘ ছিল। ডাম্পিংয়ের পরই ভাঙন শুরু হয়। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীর দাবি, আর সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত একটি টেকসই ও স্থায়ী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তা না হলে পদ্মার থাবায় একদিন পুরো জাজিরা মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।