প্রিন্ট এর তারিখঃ Aug 11, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Jul 29, 2025 ইং
মৃত ব্যক্তির কপালে চুমু দেওয়া যাবে কি

নিশ্চয়ই প্রিয়জনের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি। শোক ও আবেগ সামলানো অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। ইসলাম এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং শোক প্রকাশের অনুমতিও দিয়েছে। তবে শোক প্রকাশে কিছু সীমারেখা নির্ধারণ করেছে ইসলাম, যাতে অতিরিক্ত আবেগে অনুচিত আচরণ না ঘটে।
শোক প্রকাশে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
এক হাদিসে হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন:
"আপনজনের কান্নাকাটির কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়।"
(সহিহ বুখারি)
তবে চোখে অশ্রু ঝরা বা মনের দুঃখ প্রকাশ করা নিষিদ্ধ নয়। রাসুল (সা.) নিজেও প্রিয়জনের মৃত্যুতে কেঁদেছেন।
মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া জায়েজ
শোক প্রকাশের এক স্বাভাবিক আচরণ হলো মৃত ব্যক্তির কপালে বা মুখে চুমু দেওয়া। ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, হাদিসের আলোকে এটি জায়েজ। তবে তা হতে হবে শরিয়তের নির্ধারিত সীমার মধ্যে।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন:
"নবী (সা.) কাঁদতে কাঁদতে উসমান বিন মাজউনকে চুমু খেয়েছেন।"
(সুনানে আবু দাউদ : ৩১৬৩)
আরও বর্ণিত আছে:
"আবু বকর সিদ্দিক (রা.) নবী (সা.)-কে তার মৃত্যুর পর চুমু খেয়েছিলেন।"
(সহিহ বুখারি : ৪৪৫৭)
শায়খ ইবনে বাজ (রহ.) বলেন,
“মৃত ব্যক্তিকে চুমু খেতে কোনো আপত্তি নেই। যদি চুমু দেওয়া ব্যক্তি মৃতের মাহরাম হন বা একই লিঙ্গের কেউ হন। যেমন আবু বকর (রা.) নবী (সা.)-কে চুমু দিয়েছেন।”
(মাজমুউল ফাতাওয়া : ১৩/১০২)
অনুচিত শোক প্রকাশের নিষেধ, তবে শোক প্রকাশের নামে যদি কেউ গালে চপেটাঘাত করে, জামা ছিঁড়ে ফেলে কিংবা উচ্চস্বরে বিলাপ করে, তাহলে তা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
হজরত আবদুল্লাহ (রা.) বলেন:
"যে ব্যক্তি শোকে গালে চপেটাঘাত করে, জামার অংশ ছিঁড়ে ফেলে এবং জাহিলি যুগের মতো চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।”
(সহিহ বুখারি : ১২৩৫; সহিহ মুসলিম : ২৯৬)
ইসলাম শোককে স্বাভাবিক মানবিক অনুভূতি হিসেবে দেখেছে। তবে শোকের বহিঃপ্রকাশে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। চোখের পানি ঝরানো ও মৃতকে ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ চুমু দেওয়া জায়েজ হলেও চিৎকার-চেঁচামেচি, গায়ে আঘাত করা, জামা ছিঁড়ে ফেলা বা অতিরিক্ত বিলাপ করা নিষিদ্ধ। ইসলামের শিক্ষা হলো শোক হোক নিয়ন্ত্রিত, মর্যাদাপূর্ণ ও ঈমানের আলোকে পরিচালিত।
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ এস, এম, এফ মিডিয়া গ্রুপ